রাতে একা থাকলে এই কাজটি কখনই করবেন না।

প্রথমেই বলে রাখি, আপনি যদি অল্পতেই ভয় পেয়ে যান তবে এই পরীক্ষাটি একা থাকলে কখনই করতে যাবেন না। কারণ এটি করার সময় আপনার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। এমন হতে পারে আপনি অন্য কারও উপস্থিতি অনুভব করলেন বা দেখতে পেলেন।

কি সেই পরীক্ষা?

ধরুন আপনি একা একটি নিস্তব্ধ ঘরে আছেন। ঘরের আলোটি ও খুব অল্প। এবার যদি আপনি সেই অল্প আলোতে কোন একটি বড় আয়নার সামনে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন তবে আপনি সেই আয়নাতে লক্ষ্য করতে পারেন অন্য কোন ব্যক্তির মুখ। এটি সবার ক্ষেত্রেই ঘটবে এমনটি নাও হতে পারে। আগেই বলেছি আপনি যদি অল্পতেই ভয় পেয়ে যান, তবে খুব সম্ভাবনা যে আপনার সাথেও এমনটি ঘটতে পারে।

পাশ্চাত্য দেশে হ্যালোইন-সম্পর্কিত বিভিন্ন খেলা প্রচলিত আছে। তারমধ্যে “ব্লাডি মেরি” খুব জনপ্রিয়। এই “ব্লাডি মেরি” ও ঠিক ওপরের উল্লেখিত পরীক্ষার মতন।

তাহলে কী সত্যই কোন অশরীরীর উদ্ভব ঘটে?

এটি শুধুমাত্র কেবল আপনার মনের ভয়। ভৌতিক কোন কারণ এই ঘটনার জন্য দায়ী নয়। আপনার মানসিক অবস্থা যদি ঠিক না থাকে এবং আপনার ভয় পাওয়ার প্রবণতা যদি বেশী হয়, তবে আপনি খুব সহজেই এই ঘটনার সাক্ষী হতে পারেন।

এই ঘটনাটির পেছনে আসল কারণ টি কী?

উর্বিনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ ক্যাপুটো একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় অংশগ্রহনকারীদের দশ মিনিটের জন্য ম্লান আলোয় আয়নায় তাকিয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। ফলাফলগুলি প্রমাণ করেছে যে ৬৬% অংশগ্রহণকারী তাদের নিজের মুখের বিশাল বিকৃতি লক্ষ করেছিলেন, ২৮% অচেনা মানুষকে দেখেছেন এবং ৪৮% কল্পনা প্রসূত এবং রাক্ষস জাতীয় কোন অবয়ব দেখতে পেয়েছিলেন।

কীভাবে আয়না আপনার মুখটি অজানা এবং সম্ভাব্য ভয়াবহরূপে রূপান্তরিত করতে পারে?

এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের মস্তিষ্কে বর্তমান। সহজ কথায় বলতে গেলে আমাদের মস্তিস্ক একসাথে কেবল একটি মাত্র কাজ করতে পারে। উদাহরণ স্বরুপ আপনি এখন এই পোস্টটি পড়ছেন, আপনি সম্ভবত আপনার শ্বাসের ধরণ, বা আপনার চারপাশের মৃদু আওয়াজ গুলো বা অন্যান্য সাধারণ বিষয় গুলো লক্ষ করছেন না।

যখন আমরা কোন কাজ করি আমাদের মস্তিষ্ক সেই সময় যেটিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে তার ওপর সম্পূর্ণ ফোকাস করে থাকে। আমাদের মস্তিষ্ক অ-প্রাসঙ্গিক উদ্দীপনা গুলি বাদ দেয়।

এই ঘটনাটিকে ট্রোক্সলার প্রভাব হিসাবে অভিহিত করা হয়। ১৮০৪ সালে ইগনাজ ট্রক্সলার নামে একজন চিকিত্সক এবং দার্শনিক এটি আবিষ্কার করেছিলেন। ইন্টারনেটে আপনি অনেক অপটিক্যাল ইলুউশন ছবি দেখেছেন। তারমধ্যে বেশিরভাগ ট্রোক্সলার প্রভাব এর সাথে যুক্ত।

একটি জনপ্রিয় উদাহরণ হিসেবে নিচের ছবিটিতে প্রায় ২০ সেকেন্ডের জন্য লাল বিন্দুটির দিকে তাকিয়ে থাকার চেষ্টা করুন।

red dot illusion

আপনি লক্ষ করবেন চারি ধারের নীলাভ চক্রটি আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এবং একসময় পরে সেটি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু আমরা লাল বিন্দুটির ওপর ফোকাস করছি এবং আমাদের মস্তিষ্ক ও সম্পূর্ণ ভাবে সেই লাল বিন্দুটির দিকে ফোকাস করবে। তাই পাশের নীলাভ চক্রটিকে মস্তিষ্ক থেকে হারিয়ে যাবে।

ঠিক একই ভাবে আমরা যখন মৃদু আলোতে আয়নার সামনে দারিয়ে মুখের কোনও অংশে ফোকাস করি তখন মুখের কিছু অংশ নীলাভ চক্রের মত আয়ানায় মিশে যায়। এরফলে আমরা আয়নায় আমাদের বিকৃত মুখ দেখতে পাই।