কাগজ ভাঁজ করে চাঁদে যাওয়া, যুক্তিটি অদ্ভুত না? যদি কাগজ ভাঁজ করেই চাঁদে যাওয়া যায় তবে আর মহাকাশ যান এর দরকার কি? আসলে এটি একটি গণনার কথা বলা হয়েছে। এরকম অনেক কিছু আছে যা খাতা কলমে সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে তা করা যায় না। আজকে ঠিক সেরকমই একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করব।
ধরুন আপনাকে একটি কাগজ দেওয়া হল। আপনাকে বলা হল কাগজটি ৪২ বার ভাঁজ করুন। আপনি খুব বেশি হলে ১৫ বার কাগজটিকে ভাঁজ করতে পারবেন। ৪২ বার একটি কাগজকে ভাঁজ করা সাধারণত অসম্ভব ব্যাপার। আপনি একটি A4 কাগজ কে ৮ বার ভাঁজ করতে পারবেন। ৮ বার ভাঁজ করার পর আপনি কিভাবে আর ভাঁজ করবেন?
যদি আমরা কিছু বাস্তব সীমাবদ্ধতাগুলি ভুলে যাই এবং যদি আমরা কল্পনা করে নেই যে আমরা যত বার ইচ্ছে একটি কাগজ ভাঁজ করতে পারি, তবে আমরা নিম্নলিখিত গননা গুলো করতে পারি।
ধরুন আমাদের কাছে একটি পাতলা কাগজ রয়েছে যা কেবলমাত্র ০.০০১ সেন্টিমিটার পুরু। এবার যদি কাগজটি একবার ভাঁজ করি তবে তা ০.০০২ সেন্টিমিটার পুরু হয়ে যাবে। আর দুই বার ভাঁজ করলে তা হবে ০.০০৪ সেন্টিমিটার। ঠিক সেই ভাবে তিন বারে হবে ০.০০৮ সেন্টিমিটার এবং চার বারে হবে ০.০১৬ সেন্টিমিটার।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সংখ্যা গুলি হল পাওয়ার অফ ২। এবার যদি N তম ভাঁজ করা হয় তবে হিসেব দাড়ায় n = 2^n/1000 সেন্টিমিটার
তবে ১৭ তম ভাঁজের পর হিসেব দাড়ায় 2^17/1000 = 131 সেন্টিমিটার
২৫ তম ভাঁজের পর পরে এটি ৩৩,৫৫৪ সেমি বা ০.২৫ মাইল হবে। যা কিনা এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের উচ্চতার সমান হবে। আপনি যদি ৩০ বার কোনও কাগজ ভাঁজ করেন তবে তা ওপরের হিসেব অনুযায়ী ৬.৬৭ মাইল হবে। আবার যদি আপনি এটি ৪০ বার ভাঁজ করেন তবে এটি আপনাকে মহাকাশে নিয়ে যেতে পারে।
সুতরাং ০.০০১ সেন্টিমিটার পুরু একটি কাগজ দিয়ে চাঁদে পৌঁছতে আপনাকে ৪৫ বার সেই কাগজটি ভাঁজ করতে হবে। তবে আপনি যখন একটি কাগজের টুকরো ভাঁজ করবেন, ঠিক একই হারে সেই কাগজটির ক্ষেত্রফল ও হ্রাস পেতে থাকবে। সুতরাং আপনি যদি A4 আকারের কাগজটি 45 বার ভাঁজ করেন তবে এর ক্ষেত্রফল হবে 1.77 × 10-15m2। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের ক্রস-সেকশন করলে ক্ষেত্রফল দাড়ায় 10^-28xm^2।
সুতরাং শেষ পর্যন্ত যদি আপনি একটি কাগজ ৪২/৪৫ বার ভাঁজ করতে পারেন, আপনি চাঁদে পৌঁছে যাবেন। তবে এটি পরমাণু বা অণুগুলির একক স্তরের মতো দেখাবে, যা দেখতে পাওয়া অসম্ভব। সুতরাং, শেষ পর্যন্ত, আপনি কিছুই দেখতে পাবেন না!