ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিষয়। কিছু শিক্ষিত ব্যক্তি এই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আসছেন। এই পৃথিবীতে এমন অনেক অজানা জিনিস রয়েছে যা বিজ্ঞানও উত্তর দিতে পারে না, যা শুধুই কেবল রহস্যকে বাড়িয়ে তোলে। অবস্য আমরা এখানে কোনও ধরণের বিতর্কে যাব না। আপনি কি জানেন যে এমন কিছু লেখক ছিলেন যারা তাদের কল্পনা দিয়ে যে সব লেখা লিখে গেছেন, সেই সব লেখা ভবিষ্যতে বাস্তবে পরিণত হয়েছে?
আজকের এই টপিকে এমন কিছু বই তুলে ধরব যা কিনা বাস্তবে ঘটে যাওয়া কিছু বিশ্বের বৃহত্তম ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে অনেকে মনে করে থাকেন।
- ১)
১৮৯৮ সালে মরগান রবার্টসন একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, ‘দ্য রেক অব দ্য টাইটান’, একটি ক্রুজ লাইনার সম্পর্কে, যা উত্তর আটলান্টিকের আইসবার্গের সাথে সংঘর্ষের ফলে ডুবেছিল। ঠিক ১৪ বছর পরে গল্পটি সত্য হয়েছিল যখন টাইটানিকের সাথে একই পরিণতি হয়। উপন্যাসে, জাহাজটির নাম ছিল টাইটান, যা আটলান্টিক মহাসাগরে একটি আইসবার্গে আঘাত করেছিল এবং ডুবে গেছিল।
২)
জুলস ভার্ন, তার ভবিষ্যদ্বাণী মূলক বই “ফ্রম আর্থ টু মুন”(১৮৬৫) গ্রন্থে, মহাকাশ অভিযানের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। যা ১৯৯৯ সালে চাঁদে মানব জাতির প্রথম যাত্রার মধ্য দিয়ে ১০০ বছর পরে বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। ১৮৬৫ সালে রচিত “ফ্রম আর্থ টু মুন” উপন্যাসে জুলস ভার্ন ফ্লোরিডার একটি লঞ্চ সাইটের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেসময় ফ্লোরিডায় কেনেডি স্পেস সেন্টার নির্মাণের কথা ভাবাও হয়নি। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে অন্যান্য মিলগুলি ও লক্ষ করা যায়। বই এবং বাস্তবতা উভয়ই, জাহাজে তিনজন যাত্রী ছিলেন। উল্লেখ করার মতো বিষয় হ’ল জুলুস ভার্ন তাঁর উপন্যাসে মহাকাশের নভোচারীদের অভিজ্ঞতা হিসাবে “ওজনহীনতার” ঘটনাটির পূর্বাভাস করেছিলেন।
৩)
১৯৯৪ সালে ডেবিট অফ অনার উপন্যাসে, টম ক্ল্যান্সি আক্রমণ চালানোর জন্য একটি বিমানকে হাইজ্যাক করে ব্যবহার করার কাজটি কল্পনা করেছিলেন। এই দৃশ্যটি ঠিক সাত বছর পরে সংঘটিত ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে আক্রমণ এর সাথে অত্যন্ত মিল পাওয়া যায়।
৪)
অ্যাডগার অ্যালেন পো এর উপন্যাস, দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পাইম অফ ন্যানটকেট (১৮৩৮) এ, একটি ডুবে যাওয়া জাহাজের, বেঁচে থাকা চারজন এর জীবন সংগ্রাম ও ক্যানিবালিসম (নরমাংসভক্ষণপ্রথা)সম্পর্কে লিখেছিলেন। গল্পটি সত্য হয়েছিল ৪৬ বছর পরে। এটি পো এর ক্যারিয়ারের একমাত্র সম্পূর্ণ উপন্যাস।
গল্পে, বিধ্বস্ত জাহাজের, বেঁচে যাওয়া ৪ জনের মধ্যে একজনের নাম রিচার্ড পার্কার। যিনি বাকি ৩ জনের মাংস খেয়ে বেচেছিল। ঠিক পঁয়তাল্লিশ বছর পরে, ম্যাগননেট নামক জাহাজ ডুবে গিয়ে মাত্র চারজন বেঁচে ছিল। চতুর্থ একজন হলেন রিচার্ড পার্কার, যিনি তাঁর ক্ষুধা মেটাতে তাঁর সহযাত্রীর মাংস খেয়েছিলেন।
৫)
অ্যালডাস হাক্সলি বর্ণনা করেছেন, তাঁর কল্পিত বই ব্র্যাভ নিউ ওয়ার্ল্ড-এ, ভ্রূণের বিকাশের উপর অ্যালকোহলের প্রভাব। প্রায় চার দশক আগে বিজ্ঞান পারস্পরিক সম্পর্ককে স্বীকৃতি দেয়।
৬)
দুটি ভিন্ন লেখক, ডিন কুন্তজ এবং সিলভিয়া ব্রাউন, দুটি ভিন্ন সময়ে, অর্থাৎ ১৯৮১ এবং ২০০৪ -এ, একটি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারী, যার দ্বারা আক্রান্ত গোটা বিশ্ব সম্পর্কে কথা বলেছেন।
তালিকাটি সমাপ্ত করার আগে আমরা দুটি বই উল্লেখ করতে চাই যা মহামারীর পূর্বাভাস দিয়েছে। সম্প্রতি, কোভিড -১৯ শুরু হওয়ার পরে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জনপ্রিয় বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। যা দাবি করেছে যে ডিন কোন্টজ রচিত দ্য আইজ অফ ডার্কনেস বইটি কোভিড -১৯ মহামারী সংঘটিত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এটি বইয়ের একটি অংশে উহান -৪০০ নামে একটি ভাইরাসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা ওহান শহরের একটি ল্যাবে তৈরি করা হয়েছিল। যাইহোক, সেখানেই উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য শেষ হয়। উহান – ৪০০ এর লক্ষণগুলি COVID-19 এর থেকে অনেক আলাদা।
লেখক সিলভিয়া ব্রাউন তাঁর লেখা “এন্ড ওফ ডেস” -এ মহামারীর পূর্বাভাস দিয়েছেন। তার বইতে, তিনি নিউমোনিয়া জাতীয় রোগের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে। তাঁর মতে এই রোগটি যত তাড়াতাড়ি দেখা গেছে তত দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং পরে দশ বছরের ব্যবধানে ফিরে আসবে।